Monday, July 9, 2012

জাল হাদিস এর সূত্র পাতঃ-



যতটুকু জানা যায়, রসূলুল্লাহ [ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর জীবদ্দশায়, অতঃপর তাঁর প্রথম খলীফা আবুবকর সিদ্দীক (রাঃ) এবং দ্বিতীয় খলীফা উমর (রাঃ) জমানায় ছাহাবী তো নয়ই, কোন অছাহাবীও পর্যন্ত হাদীস জ্বাল করার দুঃসাহস করতে পারেনি।
তৃতীয় খলীফা উসমানগণী (রাঃ) এর আমলেই সর্বপ্রথম ইহুদীরা নবীর নামে হাদীস জ্বাল করার অপপ্রয়াস চালায়। ইসলামের পরম শত্রইহুদীরা প্রথমে আরবের কাফেরদের সাথে মিলে ইসলামের মুলোচ্ছেদ করার চেষ্টা করে। এতে অকৃতকার্য হলে তারা ইসলামের সাথে শত্রতা প্রকাশের জন্য বিভিন্ন পন্থার আশ্রয় নেয়। এগুলোর মধ্যে বড় একটি পন্থা ছিল হাদীস জ্বাল করার এ ঘৃনিত পন্থা। আব্দুল্লাহ ইবনু সাবা নামক এক ধুরন্ধর শিক্ষিত ইহুদী, তৃতীয় খলীফা উসমান গণী (রাঃ) এর কাছে এসে, বাহ্যতঃ ইসলাম গ্রহন করে এবং গোপনে ইসলামকে ধ্বংস করার কুউদ্দেশ্যে এক বিরাট ষড়যন্ত্র আরম্ভ করে। সে তার এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বিশেষ ভাবে তিনটি পন্থা অবলম্বন করে।
(১) রসূলুল্লাহ [ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নামে মিথ্যা হাদীস রচনা করে ইসলামের পবিত্রতা নষ্ট করা।
(২) মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক বিরোধ সৃষ্টি করে তাদের অগ্রগতিকে ব্যাহত করা এবং
(৩) ছাহাবীদের নামে দূর্নাম রটনা করে ইসলামের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বিনষ্ট করা।
আব্দুল্লাহ ইবনু সাবা তার এই ষড়যন্ত্র বিস্তারের জন্য ইসলামী খেলাফতের প্রানকেন্দ্র মদীনা শরীফ থেকে অনেক দুরে অবস্থিত মুসলমানদের প্রধান প্রধান শহরগুলো, যথাঃ বসরা, কুফা ও মিসরকে উপযুক্ত ক্ষেত্র হিসেবে বেচেঁ নেয়। কারণ একেতো এ শহরগুলো ছিল খলীফার দৃষ্টি থেকে অনেক দূরে, দ্বিতীয়তঃ এ সকল স্থানের মুসলমান সৈন্যরা ছিল অধিকাংশই অ-ছাহাবী, নও মুসলামন তরূণ। যাদের পক্ষে রসূলুল্লাহর সাহচর্য লাভ করে ইসলাম সম্পর্কে পরিপক্ষ হওয়ার বা সরাসরি রসুলুল্লাহর কাছ থেকে হাদীস লাভের কোন সুযোগ হয়নি। এমনিভাবে সে চতুর্থ খলীফা আলী (রাঃ)-কেই একজন উপযুক্ত পাত্র হিসেবে গ্রহন করল, যার নাম করে মুসলামানদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করা অত্যন্ত সহজ ছিল। কারণ, তিনি ছিলেন রসূলুল্লাহ [ছাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নিকট আতœীয় এবং ফাতেমা (রাঃ) এর স্বামী।
আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা প্রথমে বছরায় গমন করে এবং বলতে থাকে যে, “আালী (রাঃ) রসূলুল্লাহর কাছ থেকে কুরআন ছাড়াও বিশেষ জ্ঞান প্রাপ্ত হয়েছেন এবং তিনি হচ্ছেন রসূলুল্লাহর ওছী {যার জন্য রসুল নিজে ওয়াছিয়াত করে গেছেন}। সুতরাং তিনি খেলাফতের হকদারইত্যাদি আরো অনেক বানোয়াট ও জ্বাল কল্প কাহিনী আলীর শানে বলে মানুষের হৃদয়ঙ্গম করার চেষ্টা করে। পরিশেষে বলতে শুরু করে আলী স্বয়ং আল্লাহ বা আল্লাহর অবতার
বছরার শাসনকর্তা আব্দুল্লাহ ইবনু আমের তার আচরণে সন্দেহ করে তাকে বছরা ত্যাগ করার নির্দেশ দেন। তখন ইবনু সাবা বছরা ছেড়ে কুফায় প্রবেশ করে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই তরুণ সৈন্যগনকে হাত করিয়া লয়। অতঃপর সে কুফা থেকেও বিতাড়িত হলে মিসরে গিয়ে উপস্থিত হয় এবং মিসরকে কেন্দ্র করে চারিদিকে তার ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করতে থাকে। স্বল্প দিনের মধ্যেই সে আশাতীত সফলতা লাভ করে এবং তৃতীয় খলীফা উসমান গণী (রাঃ) কে শহীদ করাতে সক্ষম হয়।
আলী (রাঃ) প্রথম অবস্থায় ইবনু সাবার ষড়যন্ত্র সম্পর্কে ওয়াকেফহাল ছিলেন না। কারণ সে ষড়যন্ত্র করতেছিল মদীনা থেকে অনেক দুরে। উপরন্থো সে খবীছ ধুরন্ধরও এ সকল কথার গোপনীয়তা রক্ষার জন্য সকলের প্রতি কড়া নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু অবশেষে আলী (রাঃ) তাঁর খেলাফতকালে ইবনু সাবা ইহুদীর ষড়যন্ত্র সম্পর্কে অবগত হলেন এবং হাফেজ যাহাবীর উক্তি অনুসারে ইবনু সাবাকে তার অনুচরদের সহ আগুনে পোড়ে মারলেন এমনিভাবে সাবাঈ ফিতনানির্মুল করে দিলেন। [সাবাঈ ফিতনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য,‘তারীখে ত্বাবরী, ‘তুহফায়ে ইছনা আশরিয়, ‘তারীখে মাজহাবে শীয়া, আসসুন্নাতু ওয়ামাকানতুহা ফিততাশরীয়িল ইসলামী, ইত্যাদি গ্রন্থ দ্রষ্টব্য।]
উল্লেখ্য যে, উসমানগণী (রাঃ) এর শাহাদারেত পর থেকেই বিভিন্ন ফিতনা ইসলামের মজবূত ও দূর্জয় ঘাটিতে উকি মারতে শরু করে। মুসলমানগন তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। একদল আলী (রাঃ) এর পক্ষ অবলম্নন করে মুয়াবিয়া (রাঃ) এর বিরোধিতা করতে থাকে। এদেরকেশীয়াবা রাফেজীনাম দেয়া হয় আর এক দল মুয়াবিয়া (রাঃ) এর পক্ষ অবলম্নন করে আলী (রাঃ) এর সাথে বিরোধিতা করতে থাকে। এদেরকে নাছেবী, নাম দেয়া হয়। তৃতীয় আর একদল যারা আলী (রাঃ) ও মুয়াবিয়া (রাঃ) উভয়কে প্রত্যাখ্যান করে এবং উভয়কে পথভ্রষ্ট মনে করে এরা ছিল খারেজী। এমনিভাবে মুসলমানদের মধ্যে দলাদলী শুরু হয়। প্রত্যেক দলের কুমতলবী কিছু লোকেরা নিজ দলের সহায়তা এবং অন্য দলকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য কুরআন হাদীস থেকে দলীল প্রমাণ খোঁজা শুরু করে। যেখানে দলীল না পাওয়া যায় সেখানে কুরআনের তফসীর বিকৃত করতে এবং নবীর নামে মিথ্যা রচনা করে প্রচার করতেও দ্বিধাবোধ করেনি। এমনিভাবে হাদীস জ্বাল করার ভয়াবহ ফিতনা দুনিয়াতে বড় আকারে জন্ম নেয়। ফলে সত্য অসত্য মিলে যায় এবং শুরু হয়ে যায় মুসলিম বিশ্বে জ্বাল হাদীসের ছড়াছড়ি।

No comments:

Post a Comment