Monday, August 31, 2015

ফিলিস্তিনের ইতিহাস পড়ে। চোখের অশ্রু এসে পরে

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে ফিলিস্তিন ছিল তুরস্কের ওসমানীয় খেলাফতের অধীনে শাসিত একটি সুন্দর আকর্ষণীয় ও সমৃদ্ধ প্রদেশফিলিস্তিন শ্যামল উর্বর সোনার ফসলের এলাকা ছিলএখানকার বাসিন্দারাও দৈহিক সৌন্দর্য ও কমনীয়তার প্রতীক

আয়তন দশ হাজার চারশ ঊনত্রিশ বর্গমাইলমধ্যপ্রাচ্যের উর্বর চন্দ্র’ (Fertile Crescent) নামে খ্যাত এলাকার একেবারে উত্তরে ফিলিস্তিনপৃথিবীর তিনটি প্রধান ধর্মের আবির্ভাব ঘটেছে পশ্চিম এশিয়ার একেবারে পশ্চিম অঞ্চল থেকেফিলিস্তিন থেকে ইহুদি ও খ্রিষ্টধর্ম এবং এটারই নিকটবর্তী এলাকা অর্থাৎ মক্কা থেকে অভ্যুদয় হয়েছে ইসলামেরআসমানি তিন ধর্মই ফিলিস্তিনে অবস্থিত বায়তুল মুকাদ্দাসকে শ্রদ্ধা ও ভক্তির উৎস ও কেন্দ্র বলে মনে করেউদারতা ও সহিষ্ণুতা যদি বিশ্ববাসীর মধ্যে থাকত তাহলে এ শহর হতে পারত তিন ধর্মানুসারীদের মিলনস্থলকিন্তু কী নির্মম পরিহাসস্থানটি সবসময়ই সঙ্ঘাতের কেন্দ্র হয়ে রয়েছে
ফিলিস্তিন মুসলমানদের হস্তগত হয় হজরত ওমর ফারুকের খেলাফতকালে ১৮ হিজরিতেতারপর ক্রুসেড যুদ্ধের সময় প্রায় ৯০ বছর তা ছিল খ্রিষ্টানদের দখলেআবার তা মুসলমানদের দখলে আসে গাজি সালাহুদ্দীন আইয়ুবির মাধ্যমেএরপর ১৯১৭ পর্যন্ত তা নিরবচ্ছিন্নভাবে মুসলমানদের আয়ত্তেই ছিলঅর্থাৎ প্রায় সাড়ে ১২৫০ বছর মুসলমানদের অধীনেই ছিল ফিলিস্তিন ভূমিবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগ থেকে ইঙ্গ মার্কিন মদদে ফিলিস্তিনে ইহুদিরা শক্তি বাড়াতে থাকে এবং এক পর্যায়ে স্থানীয় মুসলিম বাসিন্দাদের উৎখাত করে সেখানে একটি ইহুদি রাষ্ট্র কায়েম করেইহুদিদের জন্য এখানে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চক্রান্ত অনেক দীর্ঘ ও পরিকল্পিত
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কিছু দিন আগে কর্নেল লরেন্স দৃশ্যত মুসলমান হয়ে আরবদের প্রতারিত করেঅর্থাৎ তাদের মধ্যে আরব জাতীয়তাবাদের শ্লোগান তোলে ও প্রচারণা চালায়আরব তরুণরা তার মন্ত্রে মুগ্ধ হয়ে যায়ফল দাঁড়ায় তুর্কি খেলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ

প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালে ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ মরক্কোর সমুদ্রবন্দর কাসাব্লাঙ্কায় হামলা চালায়সেখানে তুর্কি যুদ্ধজাহাজ ছিলব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজে ৬শ সৈন্য ছিলতুর্কি মোকাবেলায় ব্রিটিশ জাহাজ ডুবে যায়অবশ্য মরক্কো তখন তুর্কি খেলাফত থেকে আলাদা হয়ে গেছেকেননা ১৯১১-এ তুর্কি খেলাফত এক এক করে মরক্কো, সেনেগাল, আলজিরিয়া, তিউনিস, লিবিয়া, মিসর, সুদান, মধ্য আফ্রিকা ও অন্য সব আফ্রিকান প্রদেশ থেকে হাত গুটিয়ে নেয়কিন্তু মধ্য প্রাচ্যে ও এশিয়ার প্রদেশগুলোর ওপর কর্তৃত্ব রাখতে সিদ্ধান্ত নেয়কিন্তু তুর্কিদের বিরুদ্ধে আরব জাতীয়তাবাদের প্রচারণা চালানোর কারণে মরক্কো থেকে সিরিয়া পর্যন্ত বিদ্রোহ দেখা দেয়অন্যভাবে বলা যায়, আটলান্টিক থেকে পারস্য উপসাগর পর্যন্ত আরব জাতীয়তাবাদের ঢেউ চলতে থাকেতুর্কি খলিফারা আরবদের সাথে সমঝোতার চেষ্টা চালান এবং যুদ্ধে তুর্কিদের পক্ষে কাজ করতে অনুরোধ জানানযুদ্ধের পর আরবদের স্বাধীনতা কিংবা ক্ষমতার ভাগ দেয়ার আশ্বাস দেনকিন্তু আরবরা কিছুতেই শান্ত হয়নিআফ্রিকার প্রদেশগুলো হাতছাড়া হয়ে গেলেও ইয়েমেন, আরব, ইরাক, সিরিয়া ও ফিলিস্তিন অর্থাৎ এশিয়ার এসব অঞ্চল তুর্কিরা ছাড়তে রাজি ছিল নাফলে এখানে তুমুল লড়াই হয়ত্রিপক্ষীয় শক্তি একজোট হয় তুর্কিদের বিরুদ্ধে এক দিকে ব্রিটিশ, আরেক দিকে ফরাসি আর অপর দিকে আরব শক্তি সম্মিলিতভাবে তুর্কি শক্তির মোকাবেলা করতে থাকেস্বাভাবিক নিয়মেই এশিয়ার সব প্রদেশ চলে যায় অন্যদের নিয়ন্ত্রণে
ইউরোপীয় বাহিনীগুলো আরবদের সহায়তার নামে এখানকার সব বন্দর ও শহর নিজেদের দখলে রাখে এই বলে যে, তুর্কিরা যদি আবার ফিরে আসেএভাবে সব প্রদেশকে আলাদা আলাদা রাষ্ট্র বানিয়ে ব্রিটেন ও ফ্রান্স নিজেদের মধ্যে এগুলো ভাগ করে নেয়আরবদের স্বাধীনতার ছলনা দিয়ে নিজেদের জালে আটকায়
তুরস্কের ওসমানি খেলাফতের বিলুপ্তি ঘোষণা করা হয়আরবরা তখন ব্রিটিশ ও ফরাসি সৈন্যদের চলে যেতে বললকিন্তু তারা যুদ্ধের ক্ষতি পুষিয়ে না নেয়া পর্যন্ত চলে যেতে অস্বীকার করলইউরোপীয় বাহিনী এভাবে জবরদখলকারী হিসেবে রয়ে গেলএখন আরবরা না পারে সইতে, না পারে কিছু বলতেঅবশ্য প্রতিবাদ ও সংগ্রাম শুরু হয়ে যায়ওদিকে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের অনুগত গোষ্ঠীও তৈরি হয়ে যায়তাদেরই হাতে এক সময়ে এসব অঞ্চলের শাসনভার ছেড়ে দিয়ে দখলদার বাহিনী আস্তে আস্তে চলে যায়তবে এজন্য স্থানীয় জনগণের ত্যাগ ও সংগ্রাম চালাতে হয়েছে দীর্ঘ দিন ধরেসিরিয়া ৩৫ বছর পর স্বাধীনতা লাভ করলেও দখলদার শক্তি এটাকে ভাগ করে সিরিয়া ও লেবানন দুটি রাষ্ট্রে পরিণত করেকোনো কোনো অঞ্চল চল্লিশ পঞ্চাশ বছরের রক্তক্ষয়ী ত্যাগ স্বীকারের পর স্বাধীন হয়ফ্রান্স বলে বসে আলজিরিয়া আমাদেরই দক্ষিণ অংশআমরা তা ছাড়ব নাফ্রান্সের জবর দখলের প্রতিবাদে গড়ে ওঠে গেরিলা যুদ্ধএ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন আহমদ বেনবিল্লাহশুরু হয় সব শহর ও গ্রামে গেরিলা যুদ্ধ ফলে ৭৫ বছর পর শেষ পর্যন্ত প্রচণ্ড লড়াই ও বিরাট ত্যাগের বিনিময়ে আলজিরিয়া স্বাধীনতা লাভ করেএভাবে তুর্কি খেলাফতের সাথে বিদ্রোহের প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করে পূর্ব আফ্রিকা ও পশ্চিম এশিয়ার জনগণ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে (১৯১৪-১৯১৯) ফিলিস্তিনে কয়েক হাজার ইহুদি বাস করতএদের অধিকাংশের পেশা ছিল ব্যবসাআর গোটা ফিলিস্তিনের বাসিন্দা ছিল আরব মুসলমানরাএদের মধ্যে ছিল উচ্চবিত্ত জমিদার, কৃষক, ব্যবসায়ী, সরকারি চাকুরে, বিশাল জলপাই বাগানের মালিক, কারখানা মালিক ইত্যাদিপ্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর যে আদমশুমারি হয় সে অনুযায়ী মুসলমানদের সংখ্যা ছিল ৭ লাখস্বাচ্ছন্দ্যে ও নির্বিঘেœ স্বচ্ছল জীবনযাপন করছিল তারাতখন কে জানত এই সুখের জীবনের পরে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে দারিদ্র্য, দুর্দশা ও শরণার্থী শিবিরের জীবনইহুদিরা ব্রিটেনের রাজার সাথে এক চুক্তি করে যে, তারা ব্রিটেনের প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সব ব্যয় পরিশোধ করবে যদি তাদের প্রতিশ্রত ভূমিতে নিজেদের একটি রাষ্ট্র গঠন করে দেয়া হয়এটা ২ নভেম্বর ১৯১৭-এর চুক্তিবৃটেনের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যালফোর এ উপলক্ষ্যে যে ঘোষণা দেন এরই নাম বেলফোর ঘোষণাচুক্তি অনুযায়ী মহারাজার সরকার সব ধরনের সহায়তার প্রতিশ্রতি দেয়কিন্তু বিষয়টি সহজ ছিল না
ফিলিস্তিন যেহেতু ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণে ছিল, তাই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ইহুদিদের পরামর্শ দিলো, তারা যেন ইউরোপ থেকে জায়গা বদল করে ফিলিস্তিনে গিয়ে বসতি স্থাপন করতে থাকে১৯১৮ পর্যন্ত ইহুদিদের সংখ্যা ৫০ হাজার থেকে বেড়ে যায়কিন্তু মুসলমানদের সংখ্যা থেকে যায় ৭ লাখইইহুদিরা পূর্ব ইউরোপ, রাশিয়া, পোল্যান্ড ও বাল্টিক এলাকাগুলো থেকে আসতে থাকে এবং ফিলিস্তিনে তাদের বসতি করে দিতে থাকে ব্রিটেন১৯২৭ পর্যন্ত ইহুদিদের ছোট বড় ২২০ বসতি গড়ে ওঠেসাম্রাজ্যবাদী ব্রিটেন সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা অনুযায়ী এসব বসতি নির্মাণ করে দেয় ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী এলাকায় অর্থাৎ হাইফা থেকে জাফা এলাকা পর্যন্ত এসব বসতি স্থাপিত হয়প্রতি বছর গড়ে ২ লাখ করে ইহুদি আসতে থাকেব্রিটিশ সরকারের পক্ষে লিগ অব নেশন্সের ম্যান্ডেট ছিলসেমতে ব্রিটিশ সরকার ইহুদিদের ন্যায়-অন্যায় সব রকমের সুবিধা দিতে থাকে এবং আরবদের উপকূলীয় এলাকা থেকে জেরুসালেমের দিকে ঠেলে দিতে থাকে১৯৩১ পর্যন্ত ফিলিস্তিনে জনসংখ্যার হার দাঁড়ায় এ রকম নিরেট আরব মুসলমান সাড়ে ৭ লাখ বা শতকরা ৭৩ ভাগ, ইহুদি পৌনে ২ লাখ বা ১৭ শতাংশ, খ্রিষ্টান ৯১ হাজার বা ৯ শতাংশ অন্যান্য ৯ হাজার বা ১ শতাংশপ্রথম দিকে কোনো কোনো নবাগত গোষ্ঠী একত্র হয়ে আরবদের কাছ থেকে কিছু জমি কেনেআবার অনেকে অনাবাদি জমি বিনামূল্যে দখল করে সেখানে বসতি গড়ে তোলেইংরেজ সরকার প্রশাসনিক ক্ষমতাবলে কিছু জমি অ্যাকোয়ার করে সেখানে ইহুদিদের বসতি নির্মাণ করে দেয়অবশেষে ১৪ মে ১৯৪৮ ফিলিস্তিনকে ভাগ করে একটি অংশের কর্তৃত্ব অর্পণ করা হয় ইহুদিদের হাতেএই ভাগাভাগি অনুযায়ী ইহুদিদের দেয়া হয় ৭ হাজার ৯৯৩ বর্গমাইল আর আরবরা পায় মাত্র ২ হাজার ৪৩৬ বর্গমাইলঅবিচার আর কাকে বলে! সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইহুদিরা আরবদের নিজেদের জন্য বরাদ্দ এলাকা থেকে বের করে দিতে শুরু করেআরবরা প্রতিবাদ করেপরিস্থিতি গড়ায় যুদ্ধ পর্যন্তজুন ১৯৪৮ থেকে জানুয়ারি ১৯৪৯ পর্যন্ত মিসর, সিরিয়া, লেবানন ও জর্দান ফিলিস্তিনিদের সহায়তা করে এবং কোনো কোনো জায়গায় ইহুদিদের হটিয়ে দিতে সক্ষম হয়জানুয়ারিতে সাময়িক যুদ্ধবিরতি হয়তারপর ইহুদিরা ৬ লাখ মুসলমানকে তাদের এলাকা থেকে বের করে দেয়গাজায় সঙ্কীর্ণ একটি ফালি বাদ দিয়ে পুরো উপকূলীয় এলাকা বরাদ্দ দেয়া হয় ইহুদিদেরপবিত্র নগর জেরুসালেমও ভাগ করা হয়আরবদের নিজেদের আবাসভূমি থেকে উচ্ছেদ করে উদ্বাস্তুতে পরিণত করা হয়আর মুসলমানদের পবিত্র নগরী জেরুসালেমে আস্ফালন করতে থাকে ইহুদিরাবিশ্বের ইতিহাসে এমন বিশ্বাসঘাতকতা, বর্বরতা, প্রতারণা ও অত্যাচারের নজির খুঁজে পাওয়া যায় নামোট কথা ইসরাইল রাষ্ট্রের আকারে একটি ছুরি বসিয়ে দেয়া হয়েছে আরবদের বুকে
ইসরাইলে ইহুদি জনসংখ্যা ১৯১৪-এর আগে কয়েক হাজার, ১৯১৮-এ ৫০ হাজার, ১৯৩১-এ ১ লাখ ৭৫ হাজার, ১৯৩৫-এ ৩ লাখ, ১৯৪৮-এ সাড়ে ৮ লাখ, ১৯৫৮-এ ২০ লাখ, ২০০০-এ ৬২ লাখ এবং ২০০৭-এ দাঁড়িয়েছে ৭৫ লাখআরবরা যদি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্কের ওসমানি খেলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করত, তাহলে তাদের এ দুর্দিন পোহাতে হতো না
আসলে ইসরাইল রাষ্ট্রটি ব্রিটেন সরকারের রাজকীয় দান ছিল নাবরং ইহুদি ধনকুবেররা পয়সা দিয়ে কিনে নিয়েছিল ফিলিস্তিনিদের পবিত্র ভূমি এবং তারপর নিজেদের ইচ্ছামতো মানচিত্র তৈরি করেছিলমুসলমানরা কোথায় যাবে, তা নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা ছিল নাএকটি জাতি ও জনগোষ্ঠীর নাম নিশানা মুছে দেয়া হলোযাদের নাম নিশানা মুছে দেয়া হচ্ছিল, তারা প্রতিবাদ জানালে তাদের সাব্যস্ত করা হয় সন্ত্রাসী, মৌলবাদী ও অসহিষ্ণু বলেসত্যিই যদি ইহুদিদের জন্য একটি পৃথক রাষ্ট্র কায়েম করার উদ্দেশ্য থাকত, তাহলে উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় প্রচুর খালি জায়গা পড়ে ছিলসেখানে তাদের জন্য একটি বিশাল বিস্তীর্ণ রাষ্ট্র কায়েম করা যেতআরবদের বুকচিরে এক ফালি জমি বের করতে হতো নাবা শত শত বছর ধরে বাস করতে থাকা লোকদের উচ্ছেদ করতে হতো নাতেমনি বিশ্ব শান্তিতে বিঘœ সৃষ্টিকারী একটি স্থায়ী উপাদান যোগ করতেও হতো নাকিন্তু সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটেন ও উদ্বাস্তু ইহুদিরা শান্তিতে থাকতে চায়নিবিশ্বকে শান্তিতে থাকতে দিতে চায়নি এখনো চায় নাবরং ইউরোপের জাতিগুলো বিশৃঙ্খলপ্রিয়এরা বিশেষ করে মুসলমানদের শান্তি বিনাশে সদা তৎপরতারপর মুসলমানদের প্রতিরোধ আন্দোলন আখ্যায়িত হয় সন্ত্রাসবাদ হিসেবে
আরবরা যে এলাকাটুকু পেয়েছে তাও দুই ভাগে বিভক্তএভাবে আরবদের আরো দুর্বল করে ফেলা হয়েছেফিলিস্তিনিরা যেন দুটি দ্বীপে অবস্থান করছেএদের তিন দিকে ইহুদিরাআর সাগরেও রয়েছে ইসরাইলের দখলএক অংশ জর্দান নদীর পশ্চিম তীরএটার গড় প্রস্থ ৩০ মাইল ও দৈর্ঘ্য ৮০ মাইলএই অংশের মাঝখানে পড়েছে জেরুসালেম নগরী, কিন্তু এটাকেও আরব ও ইসরাইলের মধ্যে ভাগ করে বায়তুল মুকাদ্দাসকেও দুই ভাগ করা হয়েছেনগরীর পূর্ব দিকটা পেয়েছে আরবরা, আর পশ্চিম দিকটা দেয়া হয়েছে ইসরাইলকেএভাবে বিবাদের একটি স্থায়ী বীজ বপন করে দেয়া হয়েছেঅথচ লিগ অব নেশন্স এ ব্যাপারে নির্বাকসুতরাং একটি খারাপ উদ্দেশ্য নিয়েই যে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই
দ্বিতীয় ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত যা গাজা ভূখণ্ড নামে পরিচিতএখানকার উল্লেখযোগ্য শহর খান ইউনুস ও আররিফাএটা একটা সঙ্কীর্ণ উপকূলীয় ভূমিআরবরা প্রাণপণে এটাকে রক্ষা করেছেএখানে প্রায়ই বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়রয়েছে খাবারের সঙ্কটআর ইহুদিরা তিন দিক থেকে অবরোধ করে রেখেছেভূখণ্ডটির প্রস্থ মাত্র ৮ মাইল ও দৈর্ঘ্য ২৫ মাইলের মতোএই দুই ভূখণ্ডে আরবরা অভ্যন্তরীণভাবে কিছুটা স্বায়ত্তশাসন ভোগ করেকিন্তু তাও ইসরাইলের অনুগ্রহের ওপর নির্ভরশীলজুন ১৯৬৭-এর যুদ্ধের পর এ দুই এলাকা কার্যত ইসরাইলের দখলেইহুদিরা এ এলাকার উর্বর ভূমিতে জলপাইয়ের বাগান উজাড় করে আরব ও ইসরাইলের মাঝখানে বিভক্তি দেয়াল নির্মাণ করেছেএভাবে আরবদের ভূমি আরো দখল করে নিয়েছে
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সাথে পশ্চিমারা প্রতারণাই করে যাচ্ছেক্যাম্প ডেভিড চুক্তি বাস্তবায়িত হতে পারেনি ইসরাইলের হঠকারিতার কারণেএই চুক্তি অনুযায়ী ২০০১-এ স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা ছিলতারপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নতুন রোডম্যাপ দিলেনইসরাইল সরকার তার কোনো মূল্য দিলো নাইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রচেষ্টাও সফল হলো নাএভাবেই চলছে ৬০ বছর ধরে আরবদের দুঃখদুর্দশা ও অনিশ্চয়তার জীবন
বিশ্বের মানচিত্রে একটি কৃত্রিম রাষ্ট্রের নাম ইসরাইলজাতিসঙ্ঘের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে অন্যায় ও অত্যাচারকে ভিত্তি করেই রাষ্ট্রটির প্রতিষ্ঠা হয়েছেএমনটি মনে করার সঙ্গত কারণ রয়েছে যে, এই কৃত্রিম রাষ্ট্রটির লক্ষ্য ছিল এ অঞ্চলে আন্তর্জাতিক ইহুদি ও অর্থনৈতিক মাফিয়া চক্রের স্বার্থ রক্ষা করাকৃত্রিম রাষ্ট্রটির গত ৬০ বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এটাই প্রমাণ মেলেবর্তমান পরিস্থিতি এই যে, একবিংশ শতাব্দীতেও যদি মানব ব্যবসার মতো লজ্জাজনক কারবার কোথাও হয়, তাহলে তাও এখানেই হচ্ছেসংবাদমাধ্যমগুলোর মতে এ ব্যাপারে কাঁচামালআমদানি করা হয় রাশিয়া ও সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলো থেকে, তারপর এগুলো সরবরাহ করা হয় নির্দিষ্ট স্থানগুলোতেরাশিয়া, সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলো ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে গত এক দশক ধরে এক ধরনের বিজ্ঞাপন দেখা যাচ্ছেতাতে মডেল, রিসিপশনিস্ট, হোটেল ওয়েট্রেস, নৃত্যশিল্পী ইত্যাদি পদের জন্য মেয়েদের ভর্তি করতে চাওয়া হয় এবং আকর্ষণীয় পারিশ্রমিকের অফার দেয়া হয়বয়সসীমা থাকে অনূর্ধ্ব ২০ বছরএ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রকাশের পর রাশিয়ান ও পূর্ব ইউরোপীয় মেয়েরা ভিড় জমায়এদের বেশিরভাগই রাশিয়ার কলেজ-ইউনিভার্সিটির ছাত্রীএভাবে শ্বেতাঙ্গ দাসীর কারবার শুরু হয়ে যায়এই কারবারের সবচেয়ে বড় বাজার ইসরাইলইসরাইলে যাওয়ার পর এখানে তাদের পরীক্ষা নেয়া হয়সবচেয়ে সুন্দরী ও চালাক চতুর মেয়েদের আলাদা করে তাদের বিশেষ ধরনের ইনস্টিটিউটে পাঠিয়ে দেয়া হয়সেখানে তাদের গোয়েন্দাবৃত্তির বিভিন্ন দিক যেমন শব্দ রেকর্ড করা, গোপন ফিল্ম বানানো, আরবি ভাষা ইত্যাদি শিক্ষা দেয়া হয়তারপর তাদের ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদে মধ্যে ভর্তি করে নেয়া হয়যারা মোসাদের কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারে, তাদের ইসরাইলি বাহিনী ও মোসাদের পরিচালনায় সক্রিয় মানব পাচারের মাফিয়া চক্রের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়এই মাফিয়া চক্র এদেরকে ইসরাইলের বিভিন্ন শহরে দেহব্যবসায় বাধ্য করেযেসব মেয়ে মাফিয়া চক্রের কথা মানতে চায় না, তাদের ওপর চলে অমানুষিক নির্যাতনএভাবে নারীব্যবসা বর্তমানে এত বেড়ে গেছে যে, ইসরাইলের সামাজিক বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছেইসরাইলি পার্লামেন্টে বিষয়টি বারবার আলোচনা হয়, কমিটি গঠন করা হয় নারী পাচার বন্ধ করার জন্যকিন্তু পরিস্থিতির কোনো উন্নতি নেই
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সব বড় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নীতিনির্ধারক সংস্থায় ইহুদিদের প্রভাব ও কর্তৃত্ব রয়েছেএসব ইহুদি আসলে আমেরিকা ও ইউরোপের বাসিন্দাতেমনি পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ সব রাজধানী ও বাণিজ্যিক শহরে রয়েছে ইহুদিদের উল্লেখযোগ্য সম্পত্তিরাশিয়ার মস্কো ও যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের মালিকানা ইহুদিদেরযেসব মুসলিম রাষ্ট্রে ইহুদিরা সরাসরি জমি বা ভবন কিনতে পারে না, সেখানে নিয়োগ করা হয় ফ্রন্টম্যানএসব ফ্রন্টম্যানের ধর্মীয় পরিচয় শনাক্ত করা অনেক সময় মুশকিল হয়যেমন আগাখানিরা মুসলিম দেশগুলোতে প্রচুর সম্পত্তির মালিককিন্তু তাদের অর্থের উৎস রহস্যজনকতাদের মূলধনের উৎস যদি ইহুদি পুঁজিপতিরা বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে আশ্চর্যের কিছু থাকবে নাইহুদিরা যেসব মুসলিম রাষ্ট্রে বর্তমানে সম্পত্তি কিনতে অত্যন্ত তৎপর, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে আরব আমিরাত, জর্দান, কাতার, মরক্কো, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও ইরাকবিভিন্ন দেশে প্রাইভেটাইজেশন কর্মসূচির পেছনে কাজ করে ইহুদি লক্ষ্য

আধুনিক উন্নত বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত বিস্তার লাভ করছে আর্মাগিদুন বা হার্মাগিদুন থিয়োলজিএই বিশ্বাস অনুযায়ী একটি মহাযুদ্ধ সংঘটিত হবে শুভ ও অশুভশক্তির মধ্যেএটা হবে ইসরাইল রাষ্ট্রের মধ্যেজেমস বেকার নামে একজন খ্রিষ্টান পাদ্রি ১৯৮১-এ বলেছিলেন নিশ্চয়ই জেরুসালেমে থেকে ২০০ মাইল পর্যন্ত এমন রক্ত প্রবাহিত হবে, যাতে লাশ ভাসতে থাকবেমজার ব্যাপার হলো যুক্তরাষ্ট্রের অনেক প্রেসিডেন্টের বিশ্বাস ছিল তারই সময়ে এ মহাযুদ্ধ সংঘটিত হবেরোনাল্ড রিগ্যানের নাম এ প্রসঙ্গে বিশেষ উল্লেখযোগ্যতা ছাড়া রিচার্ড নিক্সন, জিমি কার্টার, বুশ সিনিয়র, বুশ জুনিয়র সবারই বিশ্বাস ১৯৪৮-এ ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়েছে বাইবেলের এক ভবিষ্যদ্বাণীর বাস্তবায়ন হিসেবেআর ইহুদি-খ্রিষ্টান সম্মিলিত শক্তি যুদ্ধ করবে মুসলমানদের বিরুদ্ধেইসরাইলের রাজধানী তেলআবিব থেকে ৫৫ মাইল উত্তরে ম্যাগোডো নামে একটি প্রান্তর রয়েছেভূমধ্যসাগর থেকে এটার দূরত্ব ১৫ মাইলখ্রিষ্টান ও ইহুদিদের বিশ্বাস এখানেই হবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধএজন্য ইহুদিরা স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করছেআর সেগুলো বাস্তবায়ন করছে পর্যায়ক্রমেএই পরিকল্পনার একটি অংশ দেয়াল নির্মাণবিশাল দেয়ালের পেছন থেকেই তারা বিরুদ্ধ শক্তির মোকাবেলা করবেএমন একটি ইঙ্গিত পাওয়া যায় কুরআন মজিদেওসূরা হাশরের ১৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে তারা (ইহুদিরা) সম্মিলিতভাবে তোমাদের সাথে লড়াই করবে শুধু সংরক্ষিত জনপদে কিংবা দেয়ালের পেছন থেকেইহুদি-খ্রিষ্টানদের বিশ্বাস তারাই শুভ শক্তি এবং তাদেরই জয় হবেকিন্তু নিরপেক্ষ অমুসলিম বুদ্ধিজীবী ও বিশ্লেষকরা পর্যন্ত ইসরাইলের অশুভ চক্রান্ত ও তৎপরতার কঠোর সমালোচনা করছেনসুতরাং কৃত্রিম রাষ্ট্র ইসরাইলেরই পরাজয় হবে বলে শান্তিপ্রিয় বিশ্ববাসীর দৃঢ় বিশ্বাসআর সে কারণেই হয়তো নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ইসরাইলিদের শান্তিচুক্তি সম্পাদনে সম্মত করতে প্রাণান্ত চেষ্টা চলছে