Monday, December 8, 2014

নামীমা বা চোগলখুরি কি ইসলামে হারাম?? এর শাস্তি কি?

একজনের কথা-ঝগড়া বিবাদ, মনোমালিন্যের উদ্দেশ্যে অন্যের কাছে লাগানোই ইসলামের পরিভাষায় নামীমা বা চোগলখুরি বলে। সকল ইসলামী চিন্তাবীদ এ সম্পর্কে একমত পোষণ করেন যে, চোগলখুরি সম্পুর্ণ হারাম।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন,
“সে ব্যক্তির অনুসরণ করো না, যে কথায় কথায় শপথ করে, যে লাঞ্ছিত, যে অসাক্ষাতে নিন্দা করে, যে একজনের কথা অন্যজনের কাছে লাগায়।” [সুরা আল কালাম ১০ -১১]
রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন ,
“চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।” [বুখারি,মুসলিম,আবু দাউদ,তিরমিযি]

অপর এক হাদীসে বর্ণিত, একবার রাসুল(সা) দুটি কবরের পাশ দিয়ে যাবার সময় বললেন,
“এ দুটি কবরের অধিবাসীরা আযাবরত অবস্থায় ভুগছে। কিন্তু কোন বড় ধরণের গুনাহের জন্য তারা শাস্তিতে ভুগছে না। একজন পেশাব করে ভালোমত পবিত্র হত না। আর একজন চোগলখুরি করে বেড়াত। “
এরপর তিনি খেজুরের দুটি কাঁচা ডাল নিয়ে উভয়ের কবরে একটি করে গেড়ে দিয়ে বললেন, “ডাল দুটি না শুকানো পর্যন্ত হয়তো এদের শাস্তি কম হবে।”
এ হাদীসে, “কোন বড় ধরণের গুনাহের জন্য তারা শাস্তি ভুগছে না” এ উক্তির অর্থ একটাই, তাদের ধারণায় তাদের কৃত গুনাহ তেমন বড় ছিল না। এজন্য কোন কোন বর্ণনাতে রয়েছে, রাসুল(সা) বলেছেন, “তবে অবশ্যই তা কবীরা গুনাহ ছিল”।
রাসুল(সা) বলেছেন,
“তোমরা সবচেয়ে অধম লোক দেখতে পাবে সেই ব্যক্তিকে, যে বিভিন্ন জনের কাছে গিয়ে নিজেকে বিভিন্নভাবে বা বিভিন্ন আকারে প্রকাশ করে। আর যে ব্যক্তি পৃথিবীতে দ্বিমুখী আচরণ করবে , কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে দুটি আগুনের জিহ্বা দিবেন।” [বুখারি,মুসলিম,মুয়াত্তা]
দ্বিমুখী আচরণ দ্বারা এখানে দুজনের সাথে দুধরণের কথা বলার প্রতি ইংগিত করা হয়েছে।
হযরত আবু হুরায়রা(রা) বলেছেন ,
”দ্বিমুখী লোক বলতে সাধারণত চোগলখোরকে ধরে নেয়া হয়, যে ব্যক্তি একজনকে গিয়ে বলে ;অমুক তোমার সম্পর্কে এরুপ কথা বলেছে। সংশ্লিষ্ট দুপক্ষের যে কোন পক্ষ অথবা তৃতীয় কোন পক্ষ যে গোপনীয় বিষয় অপছন্দ করে তা প্রকাশ করা। প্রকাশিত ব্যাপারটি কারো কথা, কাজ বা কোন দোষ ত্রুটি যাই হোক না কেন । অতএব চোগলখুরি হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কেউ বা তৃতীয় কেউ অপছন্দ করে এমন তথ্য ফাঁস করা। মানুষের যে অবস্থা দৃষ্টিতে পড়ুক না কেন, তা অন্য কারো কাছে প্রকাশ করায় যদি কল্যাণ না হয় এবং এর দ্বারা সমাজকে কোন গুনাহ থেকে রক্ষা করা না যায়, তাহলে তা থেকে বিরত থাকা উচিত।”
ইমাম গাযযালী (রহ) বলেন,
“যার কাছে কেউ চোগলখুরি করে এবং বলে, অমুক তোমার সম্পর্কে এসব কথা বলেছে তখন তার উচিত ছয়টি কাজ করার সংকল্প গ্রহণ করা।
এক তাকে অবিশ্বাস করবে, কেননা সে একজন চোগলখোর ও ফাসিক। সে ব্যক্তি বিশ্বাসযোগ্য নয়।
দুই এসব কাজ থেকে তাকে বিরত থাকতে বলবে। কাজটির জন্য কঠোর সমালোচনা করে সদুপদেশ দান করবে।
তিন মন থেকে তাকে ঘৃণা করবে। কেননা সে আল্লাহর কাছে ঘৃণিত। আর আল্লাহর দৃষ্টিতে ঘৃণিত ব্যক্তিকে ঘৃনা করা ওয়াযিব বলে গণ্য।
চার যে ব্যক্তি সম্পর্কে চোগলখোর খারাপ ধারণা দিয়েছে তার সম্পর্কে তাৎক্ষণিক খারাপ ধারণা করা ঠিক হবে না। কেননা আল্লাহ বলেছেন, ”তোমরা অধিক ধারণা পোষণ থেকে বিরত থাকবে। কেননা কিছু কিছু ধারণায় গুনাহ সংঘটিত হয় ”।
পাঁচ, তার বর্ণিত তথ্য এতটা গুরুত্বো দেবে না, তার সত্যাসত্য তদন্ত করতে আরম্ভ করবে। কেননা আল্লাহ বলেছেন , “তোমরা কারো দোষ অন্বেষণের ক্ষেত্রে গোয়েন্দাগিরি করার চেষ্টা করবে না।”
ছয়, চোগলখোরকে দেয়া উপদেশ নিজেই যেন লংঘন না করে। চোগলখোর যা বলেছে তা নিয়ে সে যেন অন্যের সাথে সমালোচনা না করে।
হযরত উমার ইবন আব্দুল আযিয(রহ) কে এক ব্যক্তি কারো সম্পর্কে একটি খারাপ সংবাদ দিলে তিনি বলেন,
তুমি যদি চাও তাহলে তোমার খবরটা নিয়ে অগ্রসর হই। তুমি যদি সত্যই বলে থাকো তাহলে তোমার উপর এ আয়াতের বিধান প্রযোজ্য হবে, “তোমাদের কাছে কোন ফাসিক যদি কোন সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে তোমরা তা নিয়ে তদন্ত করতে থাকো”। আর যদি তুমি মিথ্যাবাদী হউ, তাহলে তোমার উপর এ আয়াতের বিধান কার্যকর হবে, “যে পশ্চাতে নিন্দা করে, যে একের কথা অপরের কাছে লাগায়।”
আর যদি তুমি চাও তো তোমাকে ক্ষমা করে দিই। সে বলল, আমিরুল মুমিনুন আল্লাহ ক্ষমা করুন, আমি এই কাজ আর কখনো করব না বলে প্রতিজ্ঞা করছি।”
হযরত হাসান বসরী(রহ) বলেন,
তোমার কাছে যে ব্যক্তি অন্যের কথা লাগায় জেনে রাখবে, সেও তোমার কথা অন্যের কাছে লাগায়।
এক ব্যক্তি এক বিশিষ্ট আলেমের কাছে এসে অপর এক ব্যক্তির নামে বিভিন্ন দুর্নাম করতে থাকলে তখন এ আলেম বললেন,
“তুমি আমার কাছে তিনটি অপরাধ করেছ।
প্রথম, আমার এক দ্বীনী ভাইয়ের প্রতি আমার মনে ক্ষোভ ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করেছ।
দ্বিতীয়, তার কারণে আমার মনকে দুশ্চিন্তায় ভারাক্রান্ত করেছ।
তৃতীয়, তুমি আমার কাছে বিশ্বস্ততা হারিয়েছ।
এক ব্যক্তি হযরত আলী ইবন আবি তালিব (রা ) এর নিকট এসে বলল,
অমুক আপনার নামে কুৎসা রটিয়েছে ও গালি দিয়েছে। তিনি বললেন, আমাকে তার কাছে নিয়ে চল। সে তাকে ওই ব্যক্তির কাছে নিয়ে গেল। লোকটি ভেবেছিল হযরত আলী তার কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন। কিন্তু তিনি তাকে গিয়ে বললেন, “হে ভাই ! তুমি যা বলেছ তা যদি সত্য হয়, তাহলে আল্লাহর কাছে আমি ক্ষমা চাই। আর যদি মিথ্যা হয় তাহলে আল্লাহর কাছে তোমার জন্য ক্ষমা চাই”। তখন লোকটি বলল, আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন, এমন কাজ আমি আর কখনো করব না।
কোন কোন তাফসীরকার সূরা লাহাবের যে স্থানে আবু লাহাবের স্ত্রীকে “হাম্মালাতাল হাতাব” (জ্বলন্ত কাঠ বহনকারী) বলা হয়েছে, এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন, সে ছিল একজন চোগলখোর। চোগলখুরি স্বভাবটাকে কাষ্ঠ বলে হয়েছে কেননা কাঠ যেমন আগুন জ্বালাতে সাহায্য করে, তেমনি চোগলখোর দুজনের মধ্যে বিবাদের প্ররোচনা দানে অধিক পরিমাণে সাহায্য সহায়তা করে।
চোগলখোরের কার্যক্রম শয়তানী কার্যক্রম অপেক্ষাও অধিক ক্ষতিকর। কেননা, শয়তানী কার্যক্রম সংঘটিত হয় ওয়াস ওয়াসার মাধ্যমে, আর চোগলখুরির কার্যক্রম চলে মান সম্মান হানির দ্বারা।
একবার এক ব্যক্তি দেখতে পেল বাজারে একজন নিজের দাস বিক্রি করছে। বিক্রেতা এভাবে হাকডাক করছে “এ গোলামের একটু চোগলখোরি ব্যতীত আর কোন ত্রুটি নেই”। লোকটি এ দোষটি গুরুত্ব না দিয়ে গোলামটিকে কিনে নিল। গোলামটি তার বাড়িতে অবস্থান করতে লাগল। কিছুদিন পর সে তার মনিবের স্ত্রীকে বলল, আমার মনিব আর একটি বিয়ে করতে চাইছেন, কেননা তিনি আপনার প্রতি আর তেমন অনুরক্ত নেই। আপনি কি এ বিয়ে ঠেকাতে চান আর আপনার স্বামী আপনাকে আগের মতই ভালোবাসুক এটা চান , তাহলে উনি যখন নিদ্রা যাবেন, তখন একটা ছুরি দিয়ে তার কন্ঠনালীর উপরের একটা পশম কেটে নিয়ে নিজের কাছে রাখবেন।
অন্য দিকে মনিবকে সে বলল, আপনার স্ত্রী তলে তলে অন্য একজনের প্রতি আকৃষ্ট এবং তাকে তিনি ভালোবাসেন এবং তার সাথে চক্রান্ত করে তিনি আজ আপনাকে ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করবেন। আপনি যদি বাঁচতে চান তাহলে আপনি না ঘুমিয়ে কেবল ঘুমের ভান করে শুয়ে থেকে দেখবেন, আপনার স্ত্রী কিভাবে আপনার গলায় ছুরি চালায়।
গোলামের কথামত মনিব ঠিক তাই করল, রাতে যেই তার স্ত্রী ছুরি দিয়ে তার গলার পশম কাটতে উদ্যত হল, অমনি মনিব উঠে তার হাত থেকে ছুরি নিয়ে স্ত্রীকে সাথে সাথে হত্যা করল। এরপর স্ত্রীর আত্মীয়রা এসে মনিবকে হত্যা করল। এরপর উভয়পক্ষে তুমুল গন্ডগোল শুরু হল এবং এতে উভয় পক্ষ সর্বস্বান্ত হয়ে গেল। এজন্যই আল্লাহ চোগলখোরকে ফাসিক বলে উল্লেখ করেছেন।
আল্লাহ বলেন,
“যদি তোমাদের কাছে কোন ফাসিক সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে তা যাচাই করে নাও। না জেনে যদি কারো অনিষ্ট সাধন কর, তাহলে পরিণামে তোমরা কষ্ট ভোগ করবে।” (সূরা হুজুরাত, আয়াত: ০৬)

গীবত একটি মারাত্মক কবীরা গুনাহ্‌


মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধ জীবনযাপন ছাড়া একাকী জীবন যাপন করা মানুষের পক্ষে সহজ নয়, তেমনটি কেউ কামনাও করে না। আবার পরিচিত সমাজের বাইরেও মানুষের পক্ষে চলা খুবই কঠিন। পৃথিবীর সমাজবদ্ধ কোনো মানুষই সামাজিক বিপর্যয় কামনা করতে পারেন না। মানুষ সব সময় সুখ ও শান্তি চায়। শান্তি মানুষের একটি আরাধ্য বিষয়। কিন্তু এই প্রত্যাশিত সুখ-শান্তি নির্ভর করে সমাজবদ্ধ মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর। উঁচু-নিচু, ধনী-দরিদ্র­ এসব পার্থক্যই আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। মানুষের পারস্পরিক পরিচয়ের জন্যই এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ সূরা হুজরাতে এরশাদ করেছেন,
يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ ﴿13﴾
হে মানুষ, আমি তোমাদেরকে এক নারী ও এক পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি আর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি। যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া সম্পন্ন। নিশ্চয় আল্লাহ তো সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত। (সূরা হুজুরাত: ১৩)
সুতরাং মানব সমাজের এই পার্থক্য সামাজিক ভারসাম্য রক্ষার নিমিত্তেই। যেসব কারণে সমাজের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ বিনষ্ট হয়, সমাজ বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হয়, সামাজিক মূল্যবোধ বিনষ্ট হয়, পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট হয়, তার মধ্যে অন্যতম কারণ হলো গীবত, যা মানুষকে নিকৃষ্টতম প্রাণীতে পরিণত করে। তাই তো মহান আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে এই নিকৃষ্ট স্বভাব থেকে বিরত থাকার তাগিদ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ সূরা হুজরাতের ১২ নম্বর আয়াতে বলেন,
وَلَا يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ
‘আর তোমরা কেউ কারো গীবত করো না, তোমরা কি কেউ আপন মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে ? একে তোমরা অবশ্যই ঘৃণা করবে।, (সূরা হুজুরাত:১২)
সুস্থ, স্বাধীন কোনো বিবেকবান মানুষই জ্ঞান অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত মৃত মানুষ তো দূরের কথা, যে পশু জীবিত থাকলে হালাল সেই পশু মৃত হলে তার গোশতও ভক্ষণ করবে না। অথচ মানুষ সুস্থ মস্তিষ্কে, স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে গীবতের মতো জঘন্য ফেতনায় নিমজ্জিত হয়।
গীবত কী?
গীবত শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে দোষারোপ করা, অনুপস্থিত থাকা, পরচর্চা করা, পরনিন্দা করা, কুৎসা রটনা করা, পিছে সমালোচনা করা ইত্যাদি।
পরিভাষায় গীবত বলা হয় ‘তোমার কোনো ভাইয়ের পেছনে তার এমন দোষের কথা উল্লেখ করা যা সে গোপন রেখেছে অথবা যার উল্লেখ সে অপছন্দ করে।’ (মু’জামুল ওয়াসিত) গীবতের সবচেয়ে উত্তম ও বাস্তবসম্মত সংজ্ঞা দিয়েছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা নিম্মোক্ত হাদিস থেকে পেতে পারি।
সাহাবি আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
গীবত কাকে বলে, তোমরা জান কি? সাহাবিগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -ই ভালো জানেন। তিনি বললেন, তোমার কোনো ভাই (দীনি) সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে, তা-ই গীবত। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমি যে দোষের কথা বলি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তাহলেও কি গীবত হবে? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যে দোষের কথা বল, তা যদি তোমার ভাইয়ের থাকে তবে তুমি অবশ্যই তার গীবত করলে আর তুমি যা বলছ তা যদি তার মধ্যে না থাকে তবে তুমি তার ওপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছ। (মুসলিম)
সুতরাং এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, কোনো ভাইয়ের এমন দোষের কথা বলা গীবত যা সে অপছন্দ করে।

গীবতের পরিণাম
গীবত ইসলামি শরিয়তে হারাম ও কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,
وَيْلٌ لِكُلِّ هُمَزَةٍ لُمَزَةٍ ﴿1﴾
‘ধ্বংস তাদের জন্য, যারা অগ্র-পশ্চাতে দোষ বলে বেড়ায়।’ (সূরা হুমাজাহ-১)
কেউ গীবত শুনলে তার অনুপস্থিত ভাইয়ের পক্ষ থেকে তা প্রতিরোধ করবে সাধ্যমতো। আর যদি প্রতিরোধের শক্তি না থাকে তবে তা শ্রবণ থেকে বিরত থাকবে। কেননা, ইচ্ছাকৃতভাবে গীবত শোনা নিজে গীবত করার মতোই অপরাধ। হাদিসে আছে, সাহাবি মায়মুন রাঃ বলেন,
‘একদিন স্বপ্নে দেখলাম এক সঙ্গী ব্যক্তির মৃতদেহ পড়ে আছে এবং এক ব্যক্তি আমাকে তা ভক্ষণ করতে বলছে। আমি বললাম, আমি একে কেন ভক্ষণ করব? সে বলল, কারণ তুমি অমুক ব্যক্তির সঙ্গী গোলামের গীবত করেছ। আমি বললাম, আল্লাহর কসম আমি তো তার সম্পর্কে কখনো কোনো ভালোমন্দ কথা বলিনি। সে বলল, হ্যাঁ, এ কথা ঠিক। কিন্তু তুমি তার গীবত শুনেছ এবং সম্মত রয়েছ।’
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
মিরাজের সময় আমাকে এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো যাদের নখ ছিল তামার। তারা তাদের মুখমণ্ডল ও দেহ আঁচড়াচ্ছিল। আমি জিবরীল আঃ-কে জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা? তিনি বললেন, এরা নিজ ভাইদের গীবত করত ও ইজ্জতহানি করত। (মাজহারি)
আবু সায়িদ ও জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘গীবত ব্যাভিচারের চেয়েও মারাত্মক গুনাহ। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, এটা কিভাবে? তিনি বললেন, ব্যক্তি ব্যভিচার করার পর তওবা করলে তার গোনাহ মাফ হয়ে যায়। কিন্তু গীবত যে করে তার গোনাহ আক্রান্ত প্রতিপক্ষের ক্ষমা না করা পর্যন্ত মাফ হয় না।’
সুতরাং এ কথা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হল যে, গীবত একটি জঘন্য পাপাচার। এ থেকে সবাইকে সতর্কতার সাথে বিরত থাকতে হবে।

যাদের দোষ বর্ণনা করা যায়
গীবত নিঃসন্দেহে হারাম। তারপরও যাদের দোষ বর্ণনা করা যায় তা হচ্ছে­
·       কোনো অত্যাচারীর অত্যাচারের কাহিনী প্রতিকারের আশায় বর্ণনা করা।
·       সন্তান ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে তার পিতা ও স্বামীর কাছে অভিযোগ করা।
·       ফতোয়া গ্রহণ করার জন্য ঘটনার বিবরণ দেয়া ও - প্রয়োজন ও উপযোগিতার কারণে কারো দোষ বর্ণনা করা জরুরি।
·       আবার যাদের স্বভাব গীবত করা তাদের সম্পর্কে অন্যদের সাবধান করার জন্য তার দোষ বর্ণনা করা জায়েজ। যেমন উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
‘একদা এক ব্যক্তি (মাখরামা ইবনে নওফেল) নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে সাক্ষাতের অনুমতি প্রার্থনা করলেন। তখন তিনি বললেন, তাকে আসার অনুমতি দাও, সে গোত্রের কতই না নিকৃষ্ট লোক। অতঃপর তিনি তার সাথে প্রশস্ত চেহারায় তাকালেন এবং হাসিমুখে কথা বললেন। অতঃপর লোকটি চলে গেলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তার সম্পর্কে এমন কথা বলেছেন, অতঃপর আপনিই প্রশস্ত চেহারায় তার প্রতি তাকালেন এবং হাসিমুখে কথা বললেন। এ কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আয়েশা, তুমি কি কখনো আমাকে অশ্লীলভাষী পেয়েছ ? নিশ্চয়ই কেয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালার কাছে মর্যাদার দিক দিয়ে সর্বাধিক নিকৃষ্ট সেই লোক হবে, যাকে মানুষ তার অনিষ্টের ভয়ে ত্যাগ করেছে। (বুখারি, মুসলিম)

গীবত করার কারণ
মানুষ সব সময় নিজেকে বড় করে দেখে, এই আমিত্বের আরেক নাম আত্মপূজা। এটা শুরু হয়ে গেলে আত্মপ্রীতি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তখন তার আত্মত্যাগের মতো মহৎ বৈশিষ্ট্য দূরিভূত হতে থাকে। ফলে এ স্থানে দানা বাঁধে হিংসা-বিদ্বেষ। আবার হিংসা-বিদ্বেষ থেকেই অপরের প্রতি কুধারণার সৃষ্টি হবে, যা মানুষকে গীবত করতে বাধ্য করে। সুতরাং আত্মপূজা, আত্মপ্রীতি, হিংসা-বিদ্বেষ, কুধারণাই মানুষকে গীবত করতে বাধ্য করে।

বেঁচে থাকার উপায়
গীবত থেকে বেঁচে থাকা অত্যন্ত জরুরি। এ থেকে বাঁচার প্রথম উপায় হচ্ছে অপরের কল্যাণ কামনা করা। কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘দীন হচ্ছে নিছক কল্যাণ কামনা করা।’
দ্বিতীয়ত, আত্মত্যাগ অর্থাৎ যেকোনো প্রয়োজনে অপর ভাইকে অগ্রাধিকার দেয়া। যেমন আল্লাহ সূরা হাশরের ৯ নম্বর আয়াতে এরশাদ করেছেন,
وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ ﴿9﴾
‘তারা নিজের ওপর অন্যদের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেয়, যদিও তারা অনটনের মধ্যে থাকে।’
তৃতীয়ত, অপরের অপরাধকে ক্ষমা করে দেয়া।
চতুর্থত, মহৎ ব্যক্তিদের জীবনী বেশি বেশি করে অধ্যয়ন করা।

শেষ কথা আমাদের সব সময় আল্লাহতায়ালার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে তিনি যেন অনুগ্রহ করে গীবতের মতো জঘন্য সামাজিক ব্যাধিতে আমাদের নিমজ্জিত হতে না দেন। এ ক্ষেত্রে জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে সর্বাগ্রে। কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘বান্দা যখন ভোরে নিদ্রা থেকে জাগ্রত হয় তখন শরীরের সব অঙ্গ জিহ্বার কাছে আরজ করে, তুমি আমাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো, আল্লাহর নাফরমানি কাজে পরিচালিত করো না। কেননা, তুমি যদি ঠিক থাক, তবে আমরা সঠিক পথে থাকব। কিন্তু যদি তুমি বাঁকা পথে চলো, তবে আমরাও বাঁকা হয়ে যাবো। (তিরমিজি)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যত্র বলেছেন,
‘যে ব্যক্তি আমার জন্য তার জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের জিম্মাদার হবে, আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হবো।’ (বুখারি)

Sunday, December 7, 2014

নামীমা বা চোগলখুরি

নামীমা বা চোগলখুরি
একজনের কথা-ঝগড়া বিবাদ,
মনোমালিন্যের উদ্দেশ্যে অন্যের
কাছে লাগানোই ইসলামের পরিভাষায়
নামীমা বা চোগলখুরি বলে। সকল
ইসলামী চিন্তাবীদ এ সম্পর্কে একমত
পোষণ করেন যে, চোগলখুরি সম্পুর্ণ
হারাম।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন,
“সে ব্যক্তির অনুসরণ করো না, যে কথায়
কথায় শপথ করে, যে লাঞ্ছিত,
যে অসাক্ষাতে নিন্দা করে,
যে একজনের কথা অন্যজনের
কাছে লাগায়।” [সুরা আল কালাম ১০ -১১]
রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন ,
“চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ
করতে পারবে না।” [বুখারি,মুসলিম,আবু
দাউদ,তিরমিযি]
অপর এক হাদীসে বর্ণিত, একবার রাসুল(সা)
দুটি কবরের পাশ দিয়ে যাবার সময়
বললেন,
“এ দুটি কবরের অধিবাসীরা আযাবরত
অবস্থায় ভুগছে। কিন্তু কোন বড় ধরণের
গুনাহের জন্য তারা শাস্তিতে ভুগছে না।
একজন পেশাব করে ভালোমত পবিত্র হত
না। আর একজন চোগলখুরি করে বেড়াত। “
এরপর তিনি খেজুরের দুটি কাঁচা ডাল
নিয়ে উভয়ের
কবরে একটি করে গেড়ে দিয়ে বললেন,
“ডাল দুটি না শুকানো পর্যন্ত হয়তো এদের
শাস্তি কম হবে।”
এ হাদীসে, “কোন বড় ধরণের গুনাহের
জন্য তারা শাস্তি ভুগছে না” এ উক্তির
অর্থ একটাই, তাদের ধারণায় তাদের কৃত
গুনাহ তেমন বড় ছিল না। এজন্য কোন কোন
বর্ণনাতে রয়েছে, রাসুল(সা) বলেছেন,
“তবে অবশ্যই তা কবীরা গুনাহ ছিল”।
রাসুল(সা) বলেছেন,
“তোমরা সবচেয়ে অধম লোক
দেখতে পাবে সেই ব্যক্তিকে,
যে বিভিন্ন জনের
কাছে গিয়ে নিজেকে বিভিন্নভাবে
বা বিভিন্ন আকারে প্রকাশ করে। আর
যে ব্যক্তি পৃথিবীতে দ্বিমুখী আচরণ
করবে , কিয়ামতের দিন আল্লাহ
তাকে দুটি আগুনের
জিহ্বা দিবেন।” [বুখারি,মুসলিম,মুয়াত্তা]
দ্বিমুখী আচরণ দ্বারা এখানে দুজনের
সাথে দুধরণের কথা বলার প্রতি ইংগিত
করা হয়েছে।
হযরত আবু হুরায়রা(রা) বলেছেন ,
”দ্বিমুখী লোক বলতে সাধারণত
চোগলখোরকে ধরে নেয়া হয়,
যে ব্যক্তি একজনকে গিয়ে বলে ;অমুক
তোমার সম্পর্কে এরুপ কথা বলেছে।
সংশ্লিষ্ট দুপক্ষের যে কোন পক্ষ
অথবা তৃতীয় কোন পক্ষ যে গোপনীয়
বিষয় অপছন্দ করে তা প্রকাশ করা।
প্রকাশিত ব্যাপারটি কারো কথা, কাজ
বা কোন দোষ ত্রুটি যাই হোক না কেন ।
অতএব চোগলখুরি হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট
পক্ষগুলোর কেউ বা তৃতীয় কেউ অপছন্দ
করে এমন তথ্য ফাঁস করা। মানুষের
যে অবস্থা দৃষ্টিতে পড়ুক না কেন, তা অন্য
কারো কাছে প্রকাশ করায় যদি কল্যাণ
না হয় এবং এর দ্বারা সমাজকে কোন গুনাহ
থেকে রক্ষা করা না যায়,
তাহলে তা থেকে বিরত থাকা উচিত।”
ইমাম গাযযালী (রহ) বলেন,
“যার কাছে কেউ
চোগলখুরি করে এবং বলে, অমুক তোমার
সম্পর্কে এসব কথা বলেছে তখন তার উচিত
ছয়টি কাজ করার সংকল্প গ্রহণ করা।
এক তাকে অবিশ্বাস করবে,
কেননা সে একজন চোগলখোর ও ফাসিক।
সে ব্যক্তি বিশ্বাসযোগ্য নয়।
দুই এসব কাজ থেকে তাকে বিরত
থাকতে বলবে। কাজটির জন্য কঠোর
সমালোচনা করে সদুপদেশ দান করবে।
তিন মন থেকে তাকে ঘৃণা করবে।
কেননা সে আল্লাহর কাছে ঘৃণিত। আর
আল্লাহর দৃষ্টিতে ঘৃণিত
ব্যক্তিকে ঘৃনা করা ওয়াযিব বলে গণ্য।
চার যে ব্যক্তি সম্পর্কে চোগলখোর
খারাপ ধারণা দিয়েছে তার
সম্পর্কে তাৎক্ষণিক খারাপ
ধারণা করা ঠিক হবে না। কেননা আল্লাহ
বলেছেন, ”তোমরা অধিক ধারণা পোষণ
থেকে বিরত থাকবে। কেননা কিছু কিছু
ধারণায় গুনাহ সংঘটিত হয় ”।
পাঁচ, তার বর্ণিত তথ্য
এতটা গুরুত্বো দেবে না, তার সত্যাসত্য
তদন্ত করতে আরম্ভ করবে। কেননা আল্লাহ
বলেছেন , “তোমরা কারো দোষ
অন্বেষণের
ক্ষেত্রে গোয়েন্দাগিরি করার
চেষ্টা করবে না।”
ছয়, চোগলখোরকে দেয়া উপদেশ নিজেই
যেন লংঘন না করে। চোগলখোর
যা বলেছে তা নিয়ে সে যেন অন্যের
সাথে সমালোচনা না করে।
হযরত উমার ইবন আব্দুল আযিয(রহ) কে এক
ব্যক্তি কারো সম্পর্কে একটি খারাপ
সংবাদ দিলে তিনি বলেন,
তুমি যদি চাও তাহলে তোমার
খবরটা নিয়ে অগ্রসর হই। তুমি যদি সত্যই
বলে থাকো তাহলে তোমার উপর এ
আয়াতের বিধান প্রযোজ্য হবে,
“তোমাদের কাছে কোন ফাসিক
যদি কোন সংবাদ নিয়ে আসে,
তাহলে তোমরা তা নিয়ে তদন্ত
করতে থাকো”। আর
যদি তুমি মিথ্যাবাদী হউ, তাহলে তোমার
উপর এ আয়াতের বিধান কার্যকর হবে,
“যে পশ্চাতে নিন্দা করে, যে একের
কথা অপরের কাছে লাগায়।”
আর যদি তুমি চাও
তো তোমাকে ক্ষমা করে দিই। সে বলল,
আমিরুল মুমিনুন আল্লাহ ক্ষমা করুন, আমি এই
কাজ আর কখনো করব
না বলে প্রতিজ্ঞা করছি।”
হযরত হাসান বসরী(রহ) বলেন,
তোমার কাছে যে ব্যক্তি অন্যের
কথা লাগায় জেনে রাখবে, সেও
তোমার কথা অন্যের কাছে লাগায়।
এক ব্যক্তি এক বিশিষ্ট আলেমের
কাছে এসে অপর এক ব্যক্তির
নামে বিভিন্ন দুর্নাম করতে থাকলে তখন
এ আলেম বললেন,
“তুমি আমার কাছে তিনটি অপরাধ করেছ।
প্রথম, আমার এক দ্বীনী ভাইয়ের
প্রতি আমার মনে ক্ষোভ ও বিদ্বেষ
সৃষ্টি করেছ।
দ্বিতীয়, তার কারণে আমার
মনকে দুশ্চিন্তায় ভারাক্রান্ত করেছ।
তৃতীয়, তুমি আমার
কাছে বিশ্বস্ততা হারিয়েছ।
এক ব্যক্তি হযরত আলী ইবন আবি তালিব
(রা ) এর নিকট এসে বলল,
অমুক আপনার নামে কুৎসা রটিয়েছে ও
গালি দিয়েছে। তিনি বললেন,
আমাকে তার কাছে নিয়ে চল।
সে তাকে ওই ব্যক্তির
কাছে নিয়ে গেল। লোকটি ভেবেছিল
হযরত আলী তার কাছ থেকে প্রতিশোধ
গ্রহণ করবেন। কিন্তু
তিনি তাকে গিয়ে বললেন, “হে ভাই !
তুমি যা বলেছ তা যদি সত্য হয়,
তাহলে আল্লাহর কাছে আমি ক্ষমা চাই।
আর যদি মিথ্যা হয় তাহলে আল্লাহর
কাছে তোমার জন্য ক্ষমা চাই”। তখন
লোকটি বলল,
আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন, এমন কাজ
আমি আর কখনো করব না।
কোন কোন তাফসীরকার সূরা লাহাবের
যে স্থানে আবু লাহাবের
স্ত্রীকে “হাম্মালাতাল হাতাব” (জ্বলন্ত
কাঠ বহনকারী) বলা হয়েছে, এর
ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন, সে ছিল একজন
চোগলখোর।
চোগলখুরি স্বভাবটাকে কাষ্ঠ
বলে হয়েছে কেননা কাঠ যেমন আগুন
জ্বালাতে সাহায্য করে,
তেমনি চোগলখোর দুজনের
মধ্যে বিবাদের প্ররোচনা দানে অধিক
পরিমাণে সাহায্য সহায়তা করে।
চোগলখোরের কার্যক্রম
শয়তানী কার্যক্রম অপেক্ষাও অধিক
ক্ষতিকর। কেননা, শয়তানী কার্যক্রম
সংঘটিত হয় ওয়াস ওয়াসার মাধ্যমে, আর
চোগলখুরির কার্যক্রম চলে মান সম্মান
হানির দ্বারা।
একবার এক ব্যক্তি দেখতে পেল
বাজারে একজন নিজের দাস
বিক্রি করছে।
বিক্রেতা এভাবে হাকডাক করছে “এ
গোলামের একটু চোগলখোরি ব্যতীত আর
কোন ত্রুটি নেই”। লোকটি এ
দোষটি গুরুত্ব
না দিয়ে গোলামটিকে কিনে নিল।
গোলামটি তার বাড়িতে অবস্থান
করতে লাগল। কিছুদিন পর সে তার
মনিবের স্ত্রীকে বলল, আমার মনিব আর
একটি বিয়ে করতে চাইছেন,
কেননা তিনি আপনার প্রতি আর তেমন
অনুরক্ত নেই। আপনি কি এ
বিয়ে ঠেকাতে চান আর আপনার
স্বামী আপনাকে আগের মতই
ভালোবাসুক এটা চান , তাহলে উনি যখন
নিদ্রা যাবেন, তখন একটা ছুরি দিয়ে তার
কন্ঠনালীর উপরের একটা পশম
কেটে নিয়ে নিজের কাছে রাখবেন।
অন্য দিকে মনিবকে সে বলল, আপনার
স্ত্রী তলে তলে অন্য একজনের
প্রতি আকৃষ্ট
এবং তাকে তিনি ভালোবাসেন
এবং তার সাথে চক্রান্ত করে তিনি আজ
আপনাকে ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করবেন।
আপনি যদি বাঁচতে চান
তাহলে আপনি না ঘুমিয়ে কেবল ঘুমের
ভান করে শুয়ে থেকে দেখবেন, আপনার
স্ত্রী কিভাবে আপনার গলায় ছুরি চালায়।
গোলামের কথামত মনিব ঠিক তাই করল,
রাতে যেই তার স্ত্রী ছুরি দিয়ে তার
গলার পশম কাটতে উদ্যত হল, অমনি মনিব
উঠে তার হাত
থেকে ছুরি নিয়ে স্ত্রীকে সাথে
সাথে হত্যা করল। এরপর স্ত্রীর
আত্মীয়রা এসে মনিবকে হত্যা করল। এরপর
উভয়পক্ষে তুমুল গন্ডগোল শুরু হল
এবং এতে উভয় পক্ষ সর্বস্বান্ত হয়ে গেল।
এজন্যই আল্লাহ চোগলখোরকে ফাসিক
বলে উল্লেখ করেছেন।
আল্লাহ বলেন,
“যদি তোমাদের কাছে কোন ফাসিক
সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে তা যাচাই
করে নাও। না জেনে যদি কারো অনিষ্ট
সাধন কর, তাহলে পরিণামে তোমরা কষ্ট
ভোগ করবে।” (সূরা হুজুরাত, আয়াত: ০৬)

শিফাতুল ইসলাম

Saturday, July 12, 2014

অমর' আইফোন

৯ মাস পর হারানো আইফোন ফিরে পেয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমার কৃষক কেভিন হুইটনি।

ইন্টারনেট স্পিডের নতুন রেকর্ড





প্রচলিত কপার টেলিফোন লাইনে প্রতি সেকেন্ডে ১০ গিগাবাইট ডেটা ট্রান্সফারের নতুন রেকর্ড গড়েছেন বেল ল্যাবসের বিজ্ঞানীরা। গবেষণাগারে এক জোড়া ৩০ মিটার লম্বা টেলিফোন তার ব্যবহার করেই ডেটা ট্রান্সফারের নতুর রেকর্ড করেছেন বিজ্ঞানীরা


ওই প্রযুক্তি ব্যবহার করে গবেষণাগারের বাইরেও জিবি ডেটা স্পিড অর্জন করা সম্ভব বরে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা বিবিসি। ইন্টারনেট সংযোগের জন্য ব্যয়বহুল ফাইবার অপটিক ব্যবহারও অনেকটা এড়ানো যাবে এই প্রযুক্তিতে
বেল ল্যাবস জানিয়েছে, গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির বেলজিয়াম অফিসের বিজ্ঞানীরা ‘XG-Fast’ নামের নতুন এক প্রযুক্তি আবিষ্কার করেন, যা বদৌলতেই ডেটা ট্রান্সফার গতির নতুন রেকর্ড গড়া সম্ভব হয়েছে
‘XG-Fast’ ৫০০ মেগাহার্টয পর্যন্ত তরঙ্গ ব্যবহার করে, যেখানে এর পূর্বসূরি ‘G.fast’ ১০৬ মেগাহার্টজ পর্যন্ত কাজ করত।
তবে ‘XG-Fast’-এর সীমাবদ্ধতা হল কেবল স্বল্পদূরত্বেই কাজ করে এই প্রযুক্তি। ৩০ মিটার দূরত্বে প্রতি সেকেন্ডে ১০ গিগাবাইটওয়ার ওয়ে ডেটাপাঠাতে পারে ‘XG-Fast’ প্রতি সেকেন্ড এক সঙ্গে গিগাবাইট ডেটা আপলোড এবং গিগাবাইট ডেটা ডাউনলোডও করা সম্ভব এই প্রযুক্তিতে।  
টেলিফোন লাইনে ডেটা ট্রান্সফারের নতুন রেকর্ড গড়লেও প্রতি সেকেন্ডে সর্বোচ্চ ডেটা ট্রান্সফারের কেরল্ডটা এখনও ব্রিটিশ টেলিকমের দখলে
২০১৩ সালের নভেম্বরেই ফাইবার অপটিক কেবলে প্রতি সেকেন্ড টেরাবাইট ডেটা ট্রান্সপারের রেকর্ড গড়েছিল বিটি